রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি শুধু আত্মসংযমের মাধ্যম নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য লাভের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে কিছু কারণ আছে, যা রোজা ভঙ্গ করে দেয়। এসব কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি। কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিম্নে রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো।
ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যায়।
📖 আল-কুরআন:
“এবং তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না ফজরের শ্বেত রেখা কালো রেখা থেকে পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত।”
(সুরা আল-বাকারা: ১৮৭)
📜 হাদিস:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ভুলে গিয়ে রোজা অবস্থায় কিছু খেয়ে ফেলে বা পান করে, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে। কেননা, আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।”
(বুখারি: ১৯৩৩, মুসলিম: ১১৫৫)
👉 উল্লেখ্য: ভুলবশত খেয়ে ফেললে রোজা ভাঙবে না, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে খেলে ভেঙে যাবে।
ইচ্ছাকৃতভাবে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাফফারা (শাস্তি) দিতে হবে।
📖 আল-কুরআন:
“রোজার রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করা হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ, আর তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ।”
(সুরা আল-বাকারা: ১৮৭)
📜 হাদিস:
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন,
এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, “আমি রোজা অবস্থায় আমার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে ফেলেছি।” তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন:
১) যদি পারো, তাহলে একাধারে ৬০ দিন রোজা রাখো।
২) যদি না পারো, তাহলে ৬০ জন দরিদ্রকে খাওয়াও।”
(বুখারি: ১৯৩৬, মুসলিম: ১১১১)
ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তমৈথুন বা অন্য কোনো উপায়ে বীর্যপাত ঘটালে রোজা ভেঙে যাবে।
📜 হাদিস:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“আল্লাহ তাআলা রোজাদারের খাবার, পানীয় ও যৌনাচার পরিত্যাগ করার মাধ্যমে তার জন্য রোজা ফরজ করেছেন।”
(বুখারি: ১৯০৪, মুসলিম: ১১৫১)
👉 তবে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙবে না।
নিজ ইচ্ছায় বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে, তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলে রোজা ভাঙবে না।
📜 হাদিস:
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি নিজের অজান্তে বমি করে ফেলল, তার রোজার কাযা নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করল, তার রোজা ভেঙে যাবে এবং কাযা আদায় করতে হবে।”
(তিরমিজি: ৭২০, আবু দাউদ: ২৩৮০)
রমজানে কোনো নারী যদি মাসিক বা প্রসব-পরবর্তী রক্তস্রাবে আক্রান্ত হন, তবে তাঁর রোজা ভেঙে যাবে।
📜 হাদিস:
আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন,
“রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মাসিক হলে নারী নামাজ ও রোজা পালন করবে না।’ “
(বুখারি: ১৯৫১, মুসলিম: ৩৩৫)
👉 ঋতুস্রাব শেষ হলে কাযা রোজা আদায় করতে হবে।
যেসব ইনজেকশন বা স্যালাইন শরীরে পুষ্টির যোগান দেয়, সেগুলো গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যাবে।
📜 ফিকহি মতামত:
ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেন:
“যদি ইনজেকশন খাদ্য ও পানীয়ের বিকল্প হয়, তাহলে তা রোজা ভেঙে দেবে। কিন্তু যদি তা শুধু চিকিৎসার জন্য হয়, তবে রোজা নষ্ট হবে না।”
(ফাতাওয়া ইবনে উসাইমিন, ১৯৭/১)
ধূমপান, গুটকা, হুক্কা বা অন্য কোনো ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যাবে।
📜 ফিকহি ব্যাখ্যা:
ধূমপান শরীরে খাদ্য বা পানীয়ের মতোই প্রবেশ করে, তাই এটি রোজা ভঙ্গকারী।
দাঁত তোলার সময় রক্ত গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। তবে ব্রাশ করলে বা মিসওয়াক ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না, যদি মুখের ভেতর কিছু না যায়।
📜 হাদিস:
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“আমি যদি উম্মতের কষ্টের আশঙ্কা না করতাম, তবে প্রতি ওজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।”
(বুখারি: ৮৮৭, মুসলিম: ২৫২)
রোজার বিধান সঠিকভাবে মানতে হলে আমাদের এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। ভুলবশত কোনো কারণে রোজা ভেঙে গেলে কাযা আদায় করতে হবে, আর ইচ্ছাকৃতভাবে ভাঙলে কাফফারা দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজার হক আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক:
মোঃ তানভীর আহম্মেদ রনি
বার্তা সম্পাদক, Channel Our
https://slotbet.online/